সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:১৮ পূর্বাহ্ন
মোস্তফা মিয়া- ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধিঃ
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাঁশপুকুরিয়া, চকবরখোদা ও চতরা কারিগরি কলেজ, পীরগঞ্জ বালিকা ও শেরপুর দাখিল মাদ্রাসা, নীলদরিয়া, মাদারপুর, ছোট মির্জাপুর, কাশিমপুর, মথুরাপুর, বালুয়া, আব্দুল্লাহপুর ও জাফরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম-১০ম শাখা, বড়দরগাহ্, হরিনসিং, ঘাষিপুর, বড়বদনাপাড়া, গর্ন্ধবপুর ও জলাইডাঙ্গা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ ১৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সদ্য এমপিও ভুক্ত হয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্য চতরা ইউপি’র বড় বদনাপাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষক কর্মচারিদের বেনবেইজ পুরণে নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানে কাগজে-কলমে শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে উপস্থিতি নেই বললেই চলে। অভিভাবকদের না জানিয়ে গোপনে মনগড়া পকেট কমিটি গঠন করে প্রতিষ্ঠান চালানো হয়। ফলে সভাপতির স্ত্রী কেরানি থেকে প্রধান শিক্ষক হয়েছেন। সরেজমিনে অনুসন্ধানে নানা অনিয়মের খবর উঠে এসছে।
বড় বদনাপাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্তির পরপরই রাতারাতি স্বামীকে পরিচালনা কমিটির প্রধান বানিয়ে নিজেই প্রধান শিক্ষক হয়েছেন কেরানী মোর্শেদা বেগম। এতে এলাকায় চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়। ওই প্রতিষ্ঠানের জমিদাতা ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কায়কোবাদ সাবু জানেন না, কিভাবে ওই প্রতিষ্ঠানের কেরানী রাতারাতি হেডমাস্টার হয়ে গেছে। স্বামী রেজাউল করিম পার্শ্ববর্তী গিলাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিএসসি শিক্ষক। গিলাবাড়ির শিক্ষক রেজাউল ও আমজাদের বিরুদ্ধে জাল কাগজপত্র ও স্বাক্ষর জালিয়াতির গুঞ্জন রয়েছে বলেও দাবী করেন গিলাবাড়ির প্রধান শিক্ষক গোলজার হোসেন, ওই ইউপির চেয়ারম্যান এনামুল হক শাহীন, আ’লীগ নেতা রেজানুর রহমান ননতু ও কায়কোবাদসহ অনেকে।
বদনাপাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শুধুমাত্র কাগজে-কলমে ছাত্র ছাত্রী তলিকাভুক্ত করে প্রতিদিন উপস্থিতির হাজিরা টানা হয়। বিগত কয়েক বছর ধরে ওই প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলে থাকলেও এমপিওভুক্তির পরে শিক্ষক-কর্মচারীকে দেখা যাচ্ছে, এমনটাই দাবী এলাকাবাসীর।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে- শিক্ষার্থী শুণ্য প্রতিষ্ঠানে ২টা বাজার অপেক্ষায় শিক্ষক কর্মচারিরা বারান্দায় পায়চারি করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক জানান- জেএসসি পরীক্ষার সময়ে ভাড়াকৃত ১৫/২০ জন ছাত্র/ছাত্রীকে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। এরা অধিকাংশ এসএসসি অথবা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ বা আরও বেশি যোগ্যতা সম্পন্ন কিংবা মাদরাসার শিক্ষার্থী। যে কারনে ওই বিদ্যালয়ের ফলাফল শতভাগ পাশ। বিগত ২০০১ইং সালে বিদ্যালয়টি নিজের দেয়া জমিতে প্রতিষ্ঠা করেন স্থানীয় বাসীন্দা সাবেক ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি কায়কোবাদ সাবু।
তিনি বলেন- বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা থেকে আমি সভাপতি। মোর্শেদা বেগমকে কেরানি হিসেবে নিয়োগ দেই। এমপিওভুক্ত না হওয়ায় বছরের পর বছর তালা দেয়া থাকতো স্কুলটিতে। শিক্ষক কর্মচারিরা কেউই আসতো না। দু’মাস আগে এমপিওভুক্তির ঘোষণায় হঠাৎ রাতারাতি কিভাবে আমাকে বাদ দিয়ে স্বামীকে সভাপতি বানিয়ে নিজে হেড মাস্টার হয় তা আমার বোধগম্য নয়। মোর্শেদা বেগমের যোগ্যতা না থাকায় ২০০১ইং সালে কেরানী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছি। মোর্শেদা বেগম দাবি করেন, তিনি ২০০৪ইং সালে বিএ পাশ করেন। কোন কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন তা তিনি জানাতে অপারগতা জানান।
এক পর্যায়ে মোর্শেদা বেগম উত্তেজিত হয়ে বলেন- আমি বিএ পাশ করিনি তাতে কি হয়েছে? আপনাদের কি করার আছে-করেন। আপনারা আমার বিল দিতে পারবেন? মনে করেন আমি এই প্রতিষ্ঠানের হেডমাস্টার নই? এলাকায় জনশ্রæতি রয়েছে মোর্শেদা বেগমের স্বামী রেজাউল করিমের কেরামতিতে তিনি রাতারাতি বিএপাশ করেছেন। মোর্শেদা বেগমের সনদ যাচাই করা হলেই মূল রহস্য বের হবে বলে এলাকাবাসী দাবি করেছেন। বিদ্যালয় থেকে যারা বিগত দিনে পাশ করেছে এবং ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ঠিকানা নিয়ে সরেজমিন তদন্ত করা হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে মর্মেও একাধিক সূত্র দাবি করেছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল মমিনের সাথে কথা হলে তিনি জানান- এমপিওভুক্তকরণ মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। লিখিতভাবে অনেক অভিযোগ পেয়েছি, এখনও এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীর কাগজপত্র জমা নেয়া শুরু হয়নি।